একজন কৃষক, যিনি তার ফসল বাঁচাতে আবহাওয়ার আপডেট পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন, কিংবা এক শিক্ষার্থী, যাকে শুধুমাত্র অনলাইন ক্লাস করতে কয়েক মাইল হাঁটতে হচ্ছে—এমন পরিস্থিতি ভারতে সাধারণ দৃশ্য। অথচ ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট সবার অধিকার হওয়া উচিত।
স্টারলিংক, এলন মাস্কের স্পেসএক্সের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রকল্প, ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে। তবে এটি সরাসরি পরিষেবা দেওয়ার পরিবর্তে ভারতের বৃহত্তম টেলিকম কোম্পানি জিও ও এয়ারটেলের সাথে অংশীদারিত্বে কাজ করবে। কেন এই অংশীদারিত্ব, কীভাবে এটি ভারতীয় ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে বদলে দেবে, এবং কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে—সব কিছু বিশদে আলোচনা করা যাক।
স্টারলিংক হল একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা, যা নিম্ন-কক্ষপথ (LEO) স্যাটেলাইটের মাধ্যমে উচ্চগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করে। এটি প্রচলিত ব্রডব্যান্ডের মতো ফাইবার অপটিক কেবল বা মোবাইল টাওয়ারের উপর নির্ভর করে না, বরং সরাসরি মহাকাশ থেকে ইন্টারনেট সংকেত পাঠায়।
✅ গতি: ৫০-২৫০ এমবিপিএস
✅ লেটেন্সি (সংযোগ বিলম্ব): ২০-৪০ মিলিসেকেন্ড (প্রচলিত স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের তুলনায় অনেক কম)
✅ কভারেজ: শহর, গ্রাম, পাহাড়ি এলাকা—সব জায়গায় পরিষেবা দিতে সক্ষম
বর্তমানে স্টারলিংকের ৫,৫০০-এর বেশি স্যাটেলাইট কক্ষপথে কাজ করছে, এবং ভবিষ্যতে এটি ৪২,০০০ স্যাটেলাইট স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। ফলে ভারতের মতো বিশাল দেশেও প্রতিটি অঞ্চলে ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
অন্যান্য দেশে স্টারলিংক সরাসরি ব্যবহারকারীদের পরিষেবা দেয়। কিন্তু ভারতে সরকারের নীতিগত শর্তের কারণে এটি জিও ও এয়ারটেলের সাথে কাজ করতে বাধ্য হয়েছে। কারণগুলো নিচে ব্যাখ্যা করা হলো—
🔹 ভারত সরকার চায় যে সমস্ত স্টারলিংক কল ভারতীয় গেটওয়ের (Jio & Airtel) মাধ্যমে পরিচালিত হোক।
🔹 সরাসরি স্যাটেলাইট-টু-মোবাইল কল নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কারণ এতে নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে।
🔹 সরকারের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থাকতে হবে, যাতে প্রয়োজনে কল মনিটরিং বা পরিষেবা বন্ধ করা যায়।
স্টারলিংক শুধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট পাঠালেও, স্থিতিশীল সংযোগের জন্য গ্রাউন্ড স্টেশন দরকার।
জিও ও এয়ারটেলের ২.৮ মিলিয়ন কিলোমিটারের বেশি ফাইবার নেটওয়ার্ক রয়েছে, যা স্টারলিংকের সংযোগ স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে।
জিও ও এয়ারটেলের ৮০% ভারতীয় টেলিকম বাজারের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তাই তাদের সাথে কাজ করলে—
✔ স্টারলিংক দ্রুত ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করতে পারবে
✔ জিও ও এয়ারটেল নতুন রাজস্ব উৎস পাবে
✔ গ্রাহকদের জন্য পরিষেবার দাম কমতে পারে
✅ পরিবর্তন ও খুচরা বাজার বিস্তার – স্টারলিংকের ইকুইপমেন্ট বিক্রি, ইনস্টলেশন ও সার্ভিস প্রদান করবে।
✅ ফাইবার ব্যাকহল পরিষেবা – স্টারলিংকের নেটওয়ার্কের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
✅ বাজার সম্প্রসারণ – গ্রামীণ ও শহরতলিতে পরিষেবা প্রসারিত করবে।
✅ নিয়ন্ত্রক অনুমোদনে সহায়তা – সরকার ও নিয়ন্ত্রকদের সাথে কাজ করবে।
পরিষেবা | মাসিক খরচ | গতি | উপলব্ধতা |
---|---|---|---|
Starlink | ₹২,৫০০ – ₹৩,০০০ | ৫০-২৫০ এমবিপিএস | সারা দেশ (গ্রাম ও প্রত্যন্ত এলাকা) |
Jio Fiber | ₹৩৯৯ – ₹১,৪৯৯ | ৩০ এমবিপিএস – ১ জিবিপিএস | প্রধানত শহরে |
Airtel Xstream | ₹৪৯৯ – ₹১,৫৯৯ | ৪০ এমবিপিএস – ১ জিবিপিএস | প্রধানত শহরে |
📌 স্টারলিংক ব্যয়বহুল হলেও দুর্দান্ত কভারেজ দেয়
📌 জিও ও এয়ারটেলের অংশগ্রহণ ভবিষ্যতে দাম কমাতে সাহায্য করতে পারে
🚀 ডিজিটাল বৈষম্য দূরীকরণ – গ্রামাঞ্চলে দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছানো
🎓 শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা – অনলাইন ক্লাস ও টেলি-মেডিসিন প্রসার
💰 অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি – গ্রামীণ উদ্যোক্তা ও ই-কমার্স সম্প্রসারণ
⚠ দুর্যোগ মোকাবিলা – জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগ
❌ উচ্চ খরচ – গ্রামীণ ভারতের জন্য কি এটি সাশ্রয়ী হবে?
❌ নিয়ন্ত্রক বাধা – লাইসেন্স ও স্পেকট্রাম অনুমোদন বিলম্বিত হতে পারে।
❌ আবহাওয়ার প্রভাব – ভারী বৃষ্টি ও মেঘলা আবহাওয়ায় সংযোগ বিঘ্নিত হতে পারে।
❌ নিরাপত্তা ঝুঁকি – সরকারকে কল মনিটরিং ও পরিষেবা বন্ধ করার অনুমতি দিতে হবে।
স্টারলিংকের জন্য ভারতে পরিষেবা চালু করতে নিচের অনুমোদন দরকার:
✔ DoT (Department of Telecommunications) থেকে অনুমোদন
✔ ISRO ও TRAI থেকে স্পেকট্রাম বরাদ্দ
✔ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিরাপত্তা ছাড়পত্র
প্রথম ধাপে, স্টারলিংক গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিষেবা চালু করবে। এরপর ধীরে ধীরে শহরতলিতে প্রসারিত হবে, যেখানে জিও ও এয়ারটেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।